ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প

515654

বাংলার ইলিশ বিশ্বসেরা। রুপালি ইলিশের স্বাদ ইউরোপ- আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। রঙে-রূপে-ঐতিহ্যে অর্থকরী হওয়ায় এই মাছের নামের পাশে বসেছে ‘রুপালি সোনা’। এই রুপালি সোনাকে আরও অর্থকরী করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে, সহজলভ্য হবে, মূল্যও কমবে। রপ্তানি বাড়বে বিশ্ববাজারে। খাদ্য নিরাপত্তায় আমিষ চাহিদার জোগানে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ।

‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ নামে নতুন এই প্রকল্প নিয়েছে সরকার। উচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজ এই প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার কথা। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনও সুপারিশ করেছে।

দেশের ২৯টি জেলার ১৩৪টি উপজেলায় এ মাসেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে। কার্যক্রম শুরুর মাস থেকে সুবিধা পাওয়া যাবে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন কার্যক্রম শেষ করা হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (মৎস্য পরিকল্পনা ও জরিপ) মো. মিজানুর রহমান  জানান, এ প্রকল্পের প্রস্তাবিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হলে চলতি অর্থবছরেই (২০২০-২১) প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হবে। এর মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তিনি আরও জানান, এর আগে ইকো ফিশসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদনে সুফল পাওয়া গেছে। কয়েক বছরে ইলিশ উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের মূল কর্মএলাকা হবে উপকূলীয় অঞ্চলে ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রম। মেঘনা, পদ্মা, তেঁতুলিয়া, রামনাবাদ, আগুনমুখা ও আন্ধারমানিক নদী এবং এ নদীগুলোর সঙ্গে যুক্ত শাখা-প্রশাখা ইলিশ অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত। জেলেদের সম্পৃক্ত রেখে প্রকল্পের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিচুর রহমান বলেন, ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়াতে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইলিশের প্রধান বিচরণকেন্দ্রগুলো আরও সুরক্ষিত রাখতে দক্ষিণাঞ্চলের মেঘনাসহ বড় নদীগুলো ঘিরে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে। যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে জেলে, ইলিশ ব্যবসায়ী, নদীতীরবর্তী জনপদের জনপ্রতিনিধি ও মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবশ্যই সম্পৃক্ত করতে হবে।

দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান ১ শতাংশ। প্রায় ২৫ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ইলিশ ধরা, বিক্রি ও রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। ইলিশ আহরণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক। সারাবিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৬০ শতাংশের জোগান দেয় বাংলাদেশ। আশির দশকেই এই হার আরও বেশি ছিল। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ইলিশের উৎপাদন হ্রাস পায়। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় কর্মসৃজন কর্মসূচিতে জেলেরা আর্থিক সুবিধা পাওয়ায় গত কয়েক বছরে জাটকা নিধন কমেছে। এতে ব্যাপকভাবে বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের সদস্য সচিব জাকির হোসেন আকন্দ এ বিষয়ে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়বে মৎস্যজীবীদের। খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে প্রকল্পটি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে প্রকল্পটি।

সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ইলিশের ৬টি অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা, জাটকা আহরণ করা ৩০ হাজার জেলে পরিবারের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ১০ হাজার জেলে পরিবারকে বৈধ জাল বিতরণ, ১৮ হাজার জেলেকে প্রশিক্ষণ, জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণে নির্ধারিত ২২ দিনে অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকে আরও কার্যকর করা। ইলিশ অভয়াশ্রম সংলগ্ন ১৫৪টি ইউনিয়নের জেলেদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি থাকছে। এরকম আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

জানা গেছে, বিদেশে ইলিশের চাহিদা ব্যাপক। প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও বিদেশিরা সুস্বাদু এ মাছ খেতে ভালোবাসেন। কয়েক বছর ধরে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে প্রচুর মাছও পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় ভারতে ৪৭৫ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY Rayhan